Best Offer

শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৪

পদ ছাড়তে হল প্রধান বিচারপতিকেও

 

পদ ছাড়তে হল প্রধান বিচারপতিকেও

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান








ক্ষমতার পালাবদলে বিচারালয়ের শীর্ষ পদ থেকে সরে যাওয়ার দাবি প্রবল হওয়ার পর পদত্যাগে বাধ্য হলেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

শনিবার বিকালে ফেইসবুকে এক ভিডিও বার্তায় এ খবর দিয়ে অন্তর্বতীকালীন সরকারের আইন ও বিচার উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, “আমাদের প্রধান বিচারপতি কিছুক্ষণ আগে পদত্যাগ করেছেন। উনার পদত্যাগপত্র ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে এসে পৌঁছেছে।

“এটা উপযুক্ত প্রসেসিংয়ের জন্য আমরা কালবিলম্ব না করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেব। এবং আমি আশা করব যে এটা খুব দ্রুত, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।”




এক সময় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকের দায়িত্ব পালন করা বিচারপতি ওবায়দুল হাসান দেশের চতুর্বিংশতিতম প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে আসেন গত বছরের সেপ্টেম্বরে। ২০২৬ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত তার বিচার অঙ্গনের নেতৃত্বে থাকার কথা ছিল।

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের যে দাবি উঠেছে, তার ধাক্কায় মেয়াদপূর্তির দেড় বছর আগেই প্রধান বিচারপতিকে সরে যেতে হল।



শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটানো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে আন্দোলনকারীরা শনিবার আপিল বিভাগের সব বিচারকের পদত্যাগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট ঘোরাও করে।

তাদের দাবি মানা না হলে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ঘেরাওয়েরও হুঁশিয়ারি দেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

এনেক্স ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা স্লোগান তোলেন– 'এক দুই তিন চার, বিচারপতি গদি ছাড়', 'হাসিনার দালালেরা হুঁশিয়ারি সাবধান', 'অ্যাকশন অ্যাকশন বিচারপতির বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন', 'ঘেরাও ঘেরাও ঘেরাও হবে, বিচারপতির ভবন ঘেরাও হবে’।

প্রধান বিচারপতি সকালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়ে ফুলকোর্ট সভা আহ্বান করলেও আন্দোলনকারীরা ঘেরাওয়ের ডাক দেওয়ার পর তা স্থগিত করা হয়।

ফুলকোর্ট সভা আহ্বানের পর পরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক, বর্তমানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, “ফ্যাসিবাদের মদদপুষ্ট ও নানান অপকর্মে জড়িত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সরকারের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা না করে ফুলকোর্ট মিটিং ডেকেছেন।

“পরাজিত শক্তির যে কোনো প্রকার ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না। আইনজীবীরা এরইমধ্যে এর প্রতিবাদে জড়ো হয়েছেন। আমরা আগেই প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলাম। ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাদের উসকানি দিলে এর ভয়াবহ পরিণাম ভোগ করতে হবে।

“অনবিলম্বে বিনা শর্তে প্রধান বিচারপতি পদ থেকে পদত্যাগ করুন এবং ফুল কোর্ট মিটিং বন্ধ করুন।”

এর পরপরই প্রধান বিচারপতির ডাকা ফুলকোর্ট সভা স্থগিত করার খবর পাওয়া যায়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, পদত্যাগের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। আর বিকালে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের খবর দেন আইন উপদেষ্টা।

তবে কেবল প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্রই মন্ত্রণালয় পেয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা ভিডিও বার্তায় বলেন, “অন্যদের ব্যাপারে কোনো আপডেট নাই। আপনারা সবাই শান্ত থাকবেন। দেশের সম্পদ নষ্ট করবেন না।


এরপর কী

পরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে পরবর্তী প্রক্রিয়া নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “পরবর্তী (প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ) প্রক্রিয়াটা হচ্ছে আইন উপদেষ্টা হিসেবে আমার স্বাক্ষরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অফিসে যাবে। উনি এখন রংপুরে আছেন বা সম্ভবত বিমানে আছেন, তিনি নেমে আসার পর তার সম্মতি সাপেক্ষে এটা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। রাষ্ট্রপতি এটা গ্রহণ করলে কার্যকর হবে।

“আমরা আশা করছি এটা আজকের মধ্যেই হবে। এর পরপর নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাচ্ছি না।”

নতুন প্রধান বিচারপতি কে হচ্ছেন জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, “সেটা আমরা বলব না, তবে একটা জিনিস বলব, প্রধান উপদেষ্টার মতামত গ্রহণ করব। কনসার্ন যারা আছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলব। আমার মন্ত্রণালয় থেকে যদি এ বিষয়ে কোনো ভূমিকা রাখার থাকে, চেষ্টা করব সবচেয়ে যোগ্য, সৎ এবং নিরপেক্ষ একজন মানুষকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার।”

আন্দোলনকারী ছাত্ররা আপিল বিভাগের অন্য বিচারকদের পদত্যাগেরও দাবি করছে। এ বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, “আপিল বিভাগের আরও যারা আছেন, তাদের পদত্যাগের দাবির কথা আমি শুনেছি। শুনেছি অন্যরাও পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে এখনো পদত্যাগপত্র আইন মন্ত্রণালয়ে আসেনি।”

বদলে যাওয়া পরিস্থিততে গত বুধবার পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনার সময় নিয়োগ পাওয়া অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান, বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা।



যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন ওবায়দুল হাসান

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান দেশের চতুর্বিংশতিতম প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে আসেন গত বছরের সেপ্টেম্বরে।

রাষ্ট্রপতির আদেশে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ১২ সেপ্টেম্বর নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করে।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বিচারাঙ্গনের সর্বোচ্চ পদে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর স্থলাভিষিক্ত হন।

সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী, ৬৭ বছর বয়স, অর্থাৎ ২০২৬ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত তার প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল।

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকের দায়িত্ব পালন করে আসা বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ইসি নিয়োগের সর্বশেষ সার্চ কমিটির প্রধান ছিলেন।

১৯৫৯ সালের ১১ জানুয়ারি নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ থানার ছয়াশী (হাটনাইয়া) গ্রামে ওবায়দুল হাসানের জন্ম। তার বাবা আখলাকুল হোসাইন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং গণপরিষদের সদস্য ছিলেন। তার মায়ের নাম বেগম হোসনে আরা হোসাইন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স এবং অর্থনীতিতে মাস্টার্স করার পর আইনে লেখপড়া করেন ওবায়দুল হাসান। এলএলবি শেষ করে ১৯৮৬ সালে তিনি আইনজীবী হিসেবে জেলা বারের তালিকাভুক্ত হন।

পরে ১৯৮৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের এবং ২০০৫ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন ওবায়দুল হাসান।

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ডেপুটি এটর্নি জেনারেল হিসেবে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর ২০০৯ সালের ৩০ জুন অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগে যোগ দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। নিয়ম অনুযায়ী, দুই বছর পর তার নিয়োগ স্থায়ী হয়।

হাই কোর্টে দায়িত্ব পালন কালেই ২০১২ সালের ২৩ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারক হিসেবে যোগ দেন দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ছিলেন। ওই সময়ে ট্রাইব্যুনাল থেকে ১১টি যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় আসে।

২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারক হিসেবে নিয়োগ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

তার ভাই সাজ্জাদুল হাসান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের নেত্রকোণা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ছিলেন তিনি।






আপিল বিভাগের ৫ বিচারকের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত

 

আপিল বিভাগের ৫ বিচারকের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত




প্রধান বিচারপতির পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আরও পাঁচ বিচারক পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, শনিবার দুপুরে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ‘সংস্কারের’ যে দাবি উঠেছে, তার ধাক্কায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতে এই পরিবর্তন এল।



তবে আপিল বিভাগের সাত বিচারকের মধ্যে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম পদত্যাগ করবেন না বলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগের খবর জানিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল শনিবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আপিলেট ডিভিশনের অন্যান্য যে বিচারকরা আছেন তাদের পদত্যাগের দাবি আছে বলে আমি শুনেছি। আমি শুনেছি, টেলিভিশনের স্ক্রলে দেখছি যে অন্যান্যরা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে পদত্যাগপত্র এখনো আইন মন্ত্রণালয়ে আসে নাই।”



নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি একটা জিনিস বলব যে আমি অবশ্যই প্রধান বিচারপতির মতামত গ্রহণ করব। ওনার মতামত গ্রহণ করা সাপেক্ষে কনসার্ন যারা আছেন তাদের সবার বিবেচনা সাপেক্ষে আমার মন্ত্রণালয়ের যদি কোনো রোল থাকে এ ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করব সবচেয়ে যোগ্য, সৎ এবং নিরপেক্ষ একজন মানুষ যেন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পায়।”

শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটানো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে আন্দোলনকারীরা শনিবার আপিল বিভাগের সব বিচারকের পদত্যাগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট ঘোরাও করে।


তাদের দাবি মানা না হলে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ঘেরাওয়েরও হুঁশিয়ারি দেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

এনেক্স ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা স্লোগান তোলেন– 'এক দুই তিন চার, বিচারপতি গদি ছাড়', 'হাসিনার দালালেরা হুঁশিয়ারি সাবধান', 'অ্যাকশন অ্যাকশন বিচারপতির বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন', 'ঘেরাও ঘেরাও ঘেরাও হবে, বিচারপতির ভবন ঘেরাও হবে’।

প্রধান বিচারপতি সকালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়ে ফুলকোর্ট সভা আহ্বান করলেও আন্দোলনকারীরা ঘেরাওয়ের ডাক দেওয়ার পর তা স্থগিত করা হয়।

পরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, পদত্যাগের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। আর বিকালে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের খবর দেন আইন উপদেষ্টা।




বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০২৪

কারো ওপর কোনো হামলা হবে না: ইউনূস “এখন যে সরকার হবে, সে সরকার মানুষকে রক্ষা করবে,” বলেন তিনি।

 

কারো ওপর কোনো হামলা হবে না: ইউনূস

“এখন যে সরকার হবে, সে সরকার মানুষকে রক্ষা করবে,” বলেন তিনি।

                                                                                                                   

শাহজালাল বিমানবন্দরে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: রয়টার্স


দেশের প্রত্যেককে রক্ষা করা এবং আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাকেই প্রথম দায়িত্ব হিসেবে দেখছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নিতে যাওয়া অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

নোবেলজয়ী এ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, “আপনারা যদি আমার ওপর বিশ্বাস ও ভরসা রাখেন, তাহলে নিশ্চিত থাকেন, দেশের কোনো জায়গায় কারও ওপর হামলা হবে না। এটা আমাদের প্রথম দায়িত্ব।


“আর আমার কথা যদি না শোনেন, তাহলে আমার প্রয়োজন এখানে নাই; আমাকে বিদায় দেন। আমাকে প্রয়োজন মনে করলে আমার কথা শুনতে হবে। আমার প্রথম কথা হল, বিশৃঙ্খলা থেকে সহিংসতা থেকে দেশকে রক্ষা করা, যাতে আমাদের ছাত্ররা আমাদের যা যা পথ দেখায়, আমরা সেই পথে এগিয়ে যেতে পারি।”

ফ্রান্সের প্যারিস থেকে দুবাই হয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছান। এদিন রাত সাড়ে ৮টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে তার শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে।

বিমানবন্দরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাঘাত ঘটা এবং বিভিন্ন জায়গায় হামলা ও আক্রমণের ঘটনা ষড়যন্ত্রেরই অংশ।

“যারা বিপথে গেছে, তাদেরকে পথে আনতে চাই। যাতে একসঙ্গে কাজ করতে পারি। আসার পথে শুনলাম, এখানে আইনশৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটছে, মানুষ মানুষকে আক্রমণ করছে, ঘরবাড়ি-সম্পদ জ্বালিয়ে দিচ্ছে, চুরি-ডাকাতি হচ্ছে। অফিস আদালতে আক্রমণ করছে, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করছে। এগুলো হল ষড়যন্ত্রের অংশ।”


তিনি বলেন, “আমাদের কাজ হল- প্রতিটি মানুষকে রক্ষা করা। প্রতিটি মানুষ আমাদের ভাই, আমাদের বোন। আমাদের কাজ হল, প্রত্যেককে রক্ষা করা, একটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা- এগুলো হল অগ্রগতির বড় শত্রু। আমাদের যে যাত্রা শুরু হল, সেই যাত্রার শত্রু।”

আইনশৃঙ্খলা ফেরানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “সেই শত্রুদের যেন রোধ করা যায়, বুঝিয়ে শুনিয়ে হোক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে হোক- তাকে বোঝাতে হবে। তাকে মেরে-কেটে বোঝানো যাবে না। আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখা আমাদের প্রথম কাজ।”

দেশের মানুষের কাছে সরকার ধারণাই যে খুবই নেতিবাচক হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সরকার বলে একটা জিনিস আছে, কিন্তু মানুষের কোনো আস্থা নেই। মানুষ মনে করে, সরকার একটা দমন-নিপীড়নের একটা যন্ত্র; সে ভয়ের একটা জিনিস, তাকে সামাল দিয়ে চলা…এটা সরকার হতে পারে না।

“সরকারকে দেখে মানুষের বুক ফুলে উঠবে যে- সরকার মানুষকে সাহায্য করবে, তার পাশে এসে দাঁড়াবে। কিন্তু সরকার তার পাশে দাঁড়ায় না। এখন যে সরকার হবে, সে সরকার মানুষকে রক্ষা করবে। মানুষের আস্থাভাজন হবে, সেই আস্থাটা আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে মানুষের মনে। তাহলে মানুষও এতে যোগ দিবে।”

বাংলাদেশকে একটি ‘বড় পরিবার’ বর্ণনা করে এ পরিবারে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার তাগিদ দেন অধ্যাপক ইউনূস।

তিনি বলেন, “মানুষের মধ্যে যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে, তা সরিয়ে ফেলতে চাই। বাংলাদেশ একটি অনেক সম্ভাবনার দেশ। আমরা সম্ভাবনা নষ্ট করে দিয়েছি; এখন আবার সেই বীজতলা তৈরি করতে হবে। তারা এই দেশটা তৈরি করবে, তাদের হাত দিয়েই হবে এবং তাদের দিকে আমরা তাকাব। তাদের নির্দেশ মত আমরা অগ্রসর হব।

“আমাদের মধ্যে যেন গোলযোগ না হয়। আমরা একযোগে একসাথে চলতে পারি এবং আমরা তড়িৎ গতিতে একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার দিকে এগিয়ে যাব- এটাই আমার কামনা। আপনাদের সবার কাছে আবেদন, উনাদেরকে আপনারা সে সুযোগ দিন, আমরা যেন সে পথে এগিয়ে যাই।”

তরুণদের উদ্দেশে এই নোবেল বিজয়ী বলেন, “তোমাদের মধ্যে যে সৃজনশীলতা রয়েছে, সেটাকে কাজে লাগাতে হবে। এটা শুধু বই-খাতাতে লেখার জিনিস না। এটা প্রকাশ করার জিনিস, স্থাপন করার জিনিস।

“এই তরুণ সমাজকে বুঝাতে হবে যে, এই দেশ তোমাদের হাতে। তোমরা এটাকে যেভাবে স্বাধীন করতে পেরেছো, তোমাদের মনের মত করে এটাকে গড়তেও পারবে। তোমাদের দেখে সবাই শিখবে- কীভাবে একটা দেশ একটা তরুণ সমাজ পাল্টে ফেলতে পারে।”

কোটা সংস্কার আন্দোলনে রংপুরে গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদের কথা স্মরণ করতে গিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের গলা ধরে আসে।

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “সে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মনে গেঁথে আছে; এটা কেউ ভুলতে পারবে না। কী অবিশ্বাস্য এক সাহসী যুবক! বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

“তারপর থেকে কোনো যুবক, কোন যুবতীই আর হার মানেনি, সামনে এগিয়ে গেছে। এবং বলেছে, যত গুলি মারো, মরতে রাজি আছি। যার কারণে সারা বাংলাদেশজুড়ে এই আন্দোলন ছড়িয়ে গেছে; যার ফলে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করল।”

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনূস বলেন, “এই স্বাধীনতাটা রক্ষা করতে হবে। শুধু রক্ষা করা না, এই স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছাতে হবে। নইলে এই স্বাধীনতার কোনো দাম নেই।

“এই স্বাধীনতাকে (মানুষের ঘরে) পৌঁছানোই আমাদের প্রতিজ্ঞা, আমাদের শপথ। মানুষ যেন জানে- বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অর্থ হল, তার নিজের পরিবর্তন, ব্যক্তির পরিবর্তন, সুযোগের পরিবর্তন, তার ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের পরিবর্তন; এটা যেন প্রত্যেকে বুঝতে পারে।”



মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট, ২০২৪

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেন?

 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেন?



### অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেন?

গণরোষের মুখে সোমবার ক্ষমতা ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার পদত্যাগের ফলে মন্ত্রিসভাও ভেঙে গেছে।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, ফলে দেশ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সরকার কাঠামোও এখন নেই। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, হত্যাসহ নানা ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে।

এ কারণে সংসদ ভেঙে দিয়ে দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকার গঠনের তাগিদ দিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, কাল বিলম্ব না করে আজকের মধ্যেই পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করুন।”


“অন্যথায় দেশে আবার রাজনৈতিক শূন্যতা দেখা দিতে পারে,” বলেন মি. আলমগীর।

এদিকে, শেখ হাসিনার পতনের পর গঠিত হতে যাওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কে হবেন তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার ভোরে ফেসবুকে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
ভিডিও বার্তায় নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে সর্বজনগ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে।”

তিনি দ্রুত এই সরকার গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হওয়ার বিষয়ে ইতোমধ্যেই তারা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও জানান।

“ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে। তিনি ছাত্র-জনতার আহ্বানে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে এই গুরু দায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছেন,” বলেন নাহিদ ইসলাম।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা এটাও স্পষ্ট করেছেন যে, তারা ছাত্র-নাগরিকদের সমর্থিত সরকার ছাড়া সামরিক কিংবা অন্য কোনো ধরনের সরকারকে সমর্থন দেবেন না।

“আমরা রক্ত দিয়েছি, শহীদ হয়েছি। আমাদের প্রতিশ্রুতি একটি নতুন বাংলাদেশ গঠন করার জন্য। সেটিকে অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ছাত্র-জনতার প্রস্তাবিত সরকার বাদে অন্য কোনো ধরনের সরকার মেনে নেওয়া হবে না,” বলেন তিনি।


সংবিধানে কী আছে?


বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’ নামে কোনো ব্যবস্থার উল্লেখ নেই।

তবে কাছাকাছি ধরনের একটি ব্যবস্থার কথা আগে বলা ছিল, যেটি ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ নামে পরিচিত। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান ও ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে এই পদ্ধতি অনুসরণ করেই তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। 

কিন্তু ২০১১ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান সংশোধন করে এই ব্যবস্থা বাতিল করে। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ক্ষমতায় থাকা সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ওই সরকারই বিজয়ী রাজনৈতিক দল বা জোটের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।

কিন্তু নির্বাচন ছাড়াই হুট করে সরকারের পতন ঘটায় বর্তমানে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটি বিবেচনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি উঠেছে। 

“অথচ এ ব্যাপারে সংবিধানে কিছুই বলা নেই,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক। মূলত সে কারণেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ঘিরে আইনগত এক ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

কোন উপায় আছে?


সংবিধানকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত্তি বলা হয়ে থাকে। ফলে এটি না থাকলে দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা সমস্যা ও সংকট তৈরি হবে।

এখন সংবিধানে উল্লেখ না থাকলেও প্রয়োজনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে কি? কোন উপায় কি আছে?

সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, "উপায় অবশ্যই আছে, তবে সেটি করতে হলে বর্তমান সংসদ বহাল রেখেই সরকার গঠনের চেষ্টা করতে হবে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন আইনজীবী মি. মালিক।

এক্ষেত্রে বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে যতজনকে পাওয়া যায়, তাদেরকে নিয়েই নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করতে হবে।

“সংবিধান রক্ষার স্বার্থে এটি নামমাত্র মন্ত্রিসভা হবে। তাদেরকে দিক নির্দেশনা দেওয়ার জন্য উপদেষ্টামণ্ডলী রাখা হবে এবং তারাই রাষ্ট্র পরিচালনার মূল দায়িত্ব পালন করবেন,” বলেন মি. মালিক।

তবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ইতোমধ্যেই সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। যদিও সংবিধান অনুযায়ী সে এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির আছে কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

“বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, এককভাবে সংসদ বিলুপ্ত করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির নেই,” বলেন আইনজীবী শাহদীন মালিক।
তিনি আরও বলেন, “সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রীর লিখিত পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সংসদের অধিবেশন আহ্বান, সমাপ্তি এবং সংসদ বিলুপ্তি করবেন।”

সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের প্রথম ধারায় বলা হয়েছে, “সরকারী বিজ্ঞপ্তি দ্বারা রাষ্ট্রপতি সংসদ আহ্বান, স্থগিত ও ভঙ্গ করবেন, তবে তার দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক লিখিতভাবে প্রদত্ত পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন।”

তবে নির্বাহী আদেশে ইতোমধ্যেই সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে এখন কী করা যাবে?

“পোস্ট ভ্যালিডিটি প্রয়োগ করে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’ গঠন করা যেতে পারে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।

উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষ ক্ষমতাবলে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার পর সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে পরবর্তীতে সেটির বৈধতা দেওয়াকে আইনের ভাষায় 'পোস্ট ভ্যালিডিটি' বা দায়মুক্তি বলা হয়ে থাকে। 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর গৃহীত সামরিক শাসনের সব কর্মকাণ্ডকে ১৯৭৯ সালে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। একইভাবে, ১৯৮৮ সালে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। যদিও সামরিক শাসনের বৈধতা দেওয়া পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীকে ২০১০ সালে উচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করে।

১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর জেনারেল এরশাদের পতনের পর পঞ্চম সংসদের নির্বাচন পরিচালনার জন্য তিন মাসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছিল। সে সময় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিসহ আন্দোলনকারী সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়। বিচারপতি আহমদকে প্রথমে উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।

নির্বাচনের পরে তিনি প্রধান বিচারপতির পদে ফিরে যান। এই বিষয়গুলোর বৈধতা দেওয়া হয়েছিল সংবিধানের একাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে, যা ১৯৯১ সালে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত পঞ্চম সংসদে পাস করা হয়।


বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে কীভাবে?

 

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে কীভাবে?


বাংলাদেশে গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন নিয়ে জোর আলোচনা চলছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির মুখে ইতোমধ্যেই সংসদ ভেঙে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। শিগগিরই একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে কিছু বলা নেই। আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান ছিল, সেটিও ২০১১ সালে বাতিল করা হয়েছে।

তাহলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে কীভাবে? নতুন এই সরকার গঠিত হলে তার আইনি প্রক্রিয়া কী হবে?

জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত, খালেদা জিয়া মুক্ত, প্রধান উপদেষ্টা হতে রাজী ড. ইউনূস

জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত, খালেদা জিয়া মুক্ত, প্রধান উপদেষ্টা হতে রাজী ড. ইউনূস



রাষ্ট্রপতির আদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে এবং খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এদিকে, পদত্যাগের পর শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে অবস্থান করছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ছাত্রদের প্রস্তাবে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজি হয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিমানবন্দরে আটক সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।

মঙ্গলবার বিকেল তাকে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটকে দেয় বলে বিমানবন্দর সুত্রে নিশ্চিত হয়েছে বিবিসি বাংলা।

বিমানবন্দরে দায়িত্বরত বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইন্সের এক কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে জানান, দুপুরের দিকে দেশ ছাড়ার জন্য বিমানবন্দরের যান। সেখান থেকেই তাকে আটকে দেয়া হয়”।


তিনি জানান, রাত সাড়ে আটটার দিকে মি. মাহমুদকে হস্তান্তর করা হয় সেনাবাহিনীর কাছে।

এর আগে সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও আটক হন বিমানবন্দর থেকে....reed more